ফয়সল আহমেদ তারেক : বাংলাদেশে প্রায় ৬৬ টি পিটিআই রয়েছে। সিলেট বিভাগে রয়েছে ৪টি। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলায়ও ১টি পিটিআই রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জ পিটিআই টি স্থাপিত হয় ১৯৫২ সালে।
হবিগঞ্জ শহরের শ্বশানঘাট সংলগ্ন কালীবাড়ী ক্রস রোডের উত্তরে এর অবস্থান। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হয় এটি পিটিআই নয়, যেন মৎস্য খামার। এক সময় হবিগঞ্জ পিটিআই এর অনেক সুনাম, যশ, খ্যাতি ও কৃতিত্ব ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে কর্তৃপক্ষের অযত্বে অবহেলায় নানাবিধ সমস্যায় সম্মুখীন হয়ে এর ঐতিহ্য দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
জেলা পর্যায়ে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান পিটিআই। অথচ এই জেলায় ৪ জন পুরুষ সংসদ সদস্য, ১ জন (সংরক্ষিত) মহিলা সংসদ সদস্য, অনেক গণ্যমান্য ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ থাকার পরেও এর করুণ দশা মেনে নেয়া যায় না। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে গেল- “ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে”। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে হবিগঞ্জ পিটিআই এর প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চতুর্দিকে ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত ও দুষিত পানিতে ছয়লাব। পিটিআই এলাকার বিশাল মাঠ ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে আছে। প্রতিটি ভবনের গোড়ায় গোড়ায় পানি, কিন্তু নেই কোন নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।
ফলে এর ভেতরে চলাফেরা খুবই বিপদজনক। এটিকে সমস্যা বললে ভুল হবে, বলা চলে মহাসমস্যা। পিটিআই এরিয়ার ভেতরের সবগুলো ভবনের দিকে তাকালে মনে হয়, এক এক টি ভবন যেন পানির উপর ভেসে থাকা এক এক টি জাহাজ। জলমগ্ন হয়ে আছে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের হোস্টেল ও আবাসিক ভবন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পিটিআই এর প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে তাকালে মনে হয়, এখানে কোন আইন নেই, কোন শাসক নেই, পিটিআই কে ভালোবাসার কোন মানুষ নেই। সবাই যেন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তাহলে এসব দেখবে কে? সর্বত্রই এখানে ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ এখানে কয়েকশত প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন। এছাড়া এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল পরীক্ষণ বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানে ৬০০/৭০০ শিশু ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করছে। অভিভাবকগণ প্রতিদিন তাদের কোমলমতি শিশুদের নিয়ে স্কুলে আসেন এবং ছুটি পর্যন্ত অবস্থান করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এখানে শিশুদের চলাফেরা খুবই বিপদজনক।
পিটিআই এর প্রবেশদ্বারে একটি পুকুর এবং পেছনে মহিলা হোস্টেলের উত্তরে আরেকটি পুকুর রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধ হয়ে রাস্তা ও পুকুর বোঝা মুশকিল। যে কারণে শিশুদের স্কুলে যাতায়াত এবং প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। মহিলা হোস্টেলে থাকা প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষিকারা বলেন- সামান্য বৃষ্টি হলে আমাদের হলের নিচতলার বিভিন্ন কক্ষে পানি ঢুকে যায়। এতে অনেক সময় সাপ ও কেঁচো পর্যন্ত ঢুকে পড়ে। মহিলা হোস্টেলের গাঁ ঘেষে উত্তরে যে পুকুর রয়েছে এটি যেন পুকুর নয়, একটি বিশাল ডাস্টবিন। বাসা বাড়ির ময়লা, দোকানের ময়লা, অফিসের ময়লা, হোটেলের ময়লা সবকিছু এর মধ্যে ফেলা হয়।
শহরের ড্রেনের ময়লা পানি পর্যন্ত এর ভেতর প্রবেশ করে এবং মহিলা হোস্টেলের রাস্তায় নোংরা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষিকারা জুতা মুজা হাতে নিয়ে পশ্রাব-পায়খানা মিশ্রিত পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। মহিলা হোস্টেলের সামনে একটি মাত্র নলকূপ রয়েছে। হোস্টেলে অবস্থানরত শতশত প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষিকারা এই নলকূপের পানি পান করেন। কিন্তু সে নলকূপটিও নর্দমার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানে আর কোন নলকূপ না থাকায় বাধ্য হয়ে এর পানি পান করে প্রশিক্ষণার্থীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হবিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পিটিআই কে ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদার অফ হিউম্যানিটি দেশরত্ব শেখ হাসিনা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।